Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

আমরা যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরুদ্ধে নই: জামায়াতের লবিস্ট


সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ব্রাসেলস: ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে অনুষ্ঠিত এক শুনানিতে খোদ জামায়াতের আইনজীবী ও লবিস্ট টবি ক্যাডমেন বললেন, ‘আমরা ৭১- এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে নই। তবে এই বিচার যেন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হয়।’

মি. ক্যাডমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের যুদ্ধাপর‍াধীদের বিচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ উঠেছে, এর সাথেও আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি শুধু বলতে চাই, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন নয় এবং এই আইনের সংশোধন করে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা হোক।’

মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ‘ইউরো পার্লামেন্টারিয়ানস রেসপন্সিবল ফর পলিসি মেকিং টুওয়ার্ডস সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সেশনে বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অনুষ্ঠিত শুনানিতে জামায়াতের এই আইনজীবী উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

ইউকে গ্রিন পার্টি সদস্য জিন লেমবার্ট এমইপির সভাপতিত্বে এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ (আইসিডিবি) ও ডায়াপোরা অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট গ্রুপের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ইউরোপার্লামেন্টের এই সেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবির, ইন্টারন্যাশন‍াল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মামুন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
তুরিন আফরোজ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে সেশনে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন। শুনানিতে কয়েকজন এমইপি, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশের (আইসিডিবি) প্রেসিডেন্ট ড. পিটার কাস্টার্স, বাংলাদেশ অ্যাম্বেসেডর ইসমত জাহান, বিএএসইউজি সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, বিএএসইউজি বেলজিয়াম কো-অর্ডিনেটর ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিন, মানিক পাল, ব্রিটেনের আনসার আহমেদ উল্লাহ, হল্যাণ্ডের মনোয়ার হোসেন, জার্মানির ইঙ্গ রিটজ এবং মালদ্বীপ, শ্রিলঙ্কা ও নেপালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জিন ল্যামবার্ট এমপি বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘স্বাধীন হওয়ার চল্লিশ বছর পর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মলগ্নে যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে বিবেকবান সকলেই সমর্থন করবেন এটি আমার বিশ্বাস।’

তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ ল‍াখ শহীদের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘এই ভিকটিমদের স্বজনদের ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার অধিকার আমাদের কারও নেই। আমি নিজে এ বিষয়ে অবগত আছি, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ সরকার ৭১- এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করে এবং এই বিচার কার্যক্রমটি একটি উম্মুক্ত ট্রায়াল ও এতে অভিযুক্তদের আপিলেরও সুযোগ রয়েছে।’

শাহরিয়ার কবির তার বক্তৃতায় বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণহত্যার সাক্ষী বাংলাদেশ। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ইতিহাসের এই নৃশংসতম গণহত্যা চালায় বাংলাদেশে। ৭১- এর গণহত্যার শিকারদের স্বজনরা দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত এই হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করে আসছে।’

দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার এই বিচার শুরু করেছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা এই বিচার কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাই।’

তিনি ৭১- এর মানবতাবিরোধী অপরাধকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে ইউরো পার্লামেন্টের এই সেশনে আহ্বান জানালে সেশনের সভাপতি বিষয়টি নোট করেন।

আইসিডিবি সভাপতি ড. পিটার কাস্টার্স জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি একজন তরুণ ছাত্র ছিলেন। ওই সময় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের গণহত্যার সচিত্র প্রতিবেদন পড়ে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কাস্টার্স সেশনকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এর আগে তিন তিন বার বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালকে সমর্থন করে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে ইউরোপিয় ইউনিয়নে। এবার শুধু প্রস্তাব নয়, এই ট্রাইব্যুনালের পক্ষে সমর্থন চায় বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ।’

ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মামুন ট্রাইব্যুনালকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ইইউকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘১৯৭৩ সালের আইনটি কোনো আন্তর্জাতিক আইন নয়, এটি বাংলাদেশের একটি নিজস্ব আইন। এই আইনেই ৭১- এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।’

সেশনের মূল প্রবন্ধের উপস্থাপক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ শাড়ি পরে উপস্থিত হয়েছিলেন ইউরোপিয়  পার্লামেন্টে। তিনি বলেন, ‘আমার পরনের এই শাড়ি ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আমাকে উপহার দিয়েছেন। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর পরিচয় দিতে গিয়ে তুরিন বলেন, ‘ফেরদৌসী একজন বীরাঙ্গনা। ৭১- এ পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে তিনি ধর্ষিত হয়েছিলেন। ফেরদৌসী আজ বাংলাদেশে বীরাঙ্গনাদের প্রতীক। তাকে যারা ধর্ষণ করেছিল, তাদের এখনও তিনি বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে পারেননি। ফেরদৌসীর মত লাখ ল‍াখ নারী যারা ৭১- এ পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর সদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলেন তাদের বিচার পাওয়ার অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম।’

তিনি বলেন, ‘এই বিচার পাওয়ার অধিকার হরণ করতেই আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুরু হয়ে ষড়যন্ত্র। মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা খরচ করে জামায়াতে ইসলামী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিইস্ট নিয়োগ করে ওয়ারক্রাইম ট্রায়ালের আইন ও কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১২

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts