Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

সৌদিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দিনকাল


সৈয়দ আনাস পাশা
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
মদিনা, সৌদি আরব থেকে: শুধু সৌদি জনগণই নয়, পবিত্র ভূমি মক্কা মদিনার হেফাজতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরাও। মক্কার পবিত্র হেরেম শরিফ ও মদিনায় মসজিদে নববীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে সার্বক্ষণিক  নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি।

শুধু কাবা শরিফ বা মদিনার মসজিদে নববীই নয়, এর বাইরে সৌদি আরবের প্রায় প্রতিটি শহরেই কাজ করছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এখানকার দোকাপাটের প্রায় সব কর্মীই বাংলাদেশি বা এশিয়ান।

মদিনার একটি সড়ককে তো বাঙালি পাড়াই বলা হয়। হজের সময় বাংলাদেশসহ ব্রিটেন, আমেরিকা ও ইউরোপের বাঙালি হাজিরা চলতে ফিরতে ব্যাপক সহযোগিতা পেয়ে থাকেন এদের কাছ থেকে।

পবিত্র ভূমির হেফাজতে নিজেরা তৃপ্ত হলেও পারিশ্রমিক নিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক হতাশা। অবশ্য শুধু বাংলাদেশি নয়, পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান শ্রমিকরাও একই কাজে নিয়োজিত। মক্কায় ও মদিনায় কর্মরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক তাদের জীবন সংগ্রামের বিষয়ে কথা বললেন। পবিত্র ভূমি হেফাজতের কাজে নিজেদের তৃপ্তির কথা জানালেও অল্প বেতনে চলা কষ্টকর বলে ব্যাপক হতাশা প্রকাশ করেন বাংলানিউজের কাছে।

হতাশার পাশাপাশি রয়েছে উদ্বেগ উত্কণ্ঠাও। তাদের এ উত্কণ্ঠা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্তিতি নিয়ে। গুজব আছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে সৌদি সরকার নাকি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ওপর নাখোশ। আর তাই সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা আর নতুন করে নবায়ন বা ইস্যু করবে না।

একজন শ্রমিকের গড় মাসিক আয় ৭শ’ থেকে ৮শ’ সৌদি রিয়াল। স্বল্প বেতনে অনেক কষ্টের কাজ হলেও কাজটি অনিশ্চিত হোক এটি তারা কেউই চান না। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে বিশ্ববাপী জামায়াতিদের ক্যাম্পেইন সম্পর্কে এখানকার শ্রমিকরা খুব একটা জানেনই না।

তাদের ধারণা, যুদ্ধাপরাধ বিচারের কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্য থেকেই হয়তো বাংলাদেশি শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হতে পারে।

সৌদি-বাংলাদেশ কুটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা এ সম্পর্কে বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিজেদের মত করে যতই বিশ্লেষণ করুক, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের শ্রম সম্পদ ছাড়া সৌদি যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না, এটিকে বাস্তবতার নিরিখেই বিচার করতে হবে তাদের। কারণ এত সস্তা শ্রমবাজার আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতীয় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিলে সৌদি আরবও যে অচল হয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের দেশের এমন মূল্যবান মানবসম্পদ অন্য একটি দেশকে সার্ভিস দিয়ে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, দেশ এ সম্পদের বিনিময়ে কতটুকু মূল্যায়ন করছে?

এটা নিয়ে বাংলানিউজের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশি শ্রমিকদের কেউ কেউ। এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারে একমাত্র সরকারই। বাংলাদেশের কাছে নিজের শ্রমবাজার রক্ষার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিজ দেশকে সচল রাখতে শ্রমিক ধরে রাখার বিষয়টিও সৌদি আরবের জন্য কম গুরুত্বের নয়। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে জামায়াতিদের অপ-প্রচারে নিরীহ শ্রমিকরা যাতে কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন না হন, এটি যেন তাদের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে। এ বিষয়টির প্রতিও সরকারের নজর দেওয়া খুবই জরুরি। সৌদির পত্রপত্রিকায় জামায়াতিদের এক তরফা অপপ্রচারের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করা উচিত। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখেই বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১২
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts