Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

Banglanews24.com: লন্ডনে বৈশাখী মেলায় লক্ষ প্রাণের উচ্ছলতা




লন্ডন: এ যেন একখন্ড বাংলাদেশ। ১লা বৈশাখে রমনার বটমূল। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে বাঙালির বাধভাঙ্গা জনজোয়ার। ঢাক-ঢোল, হরেক বাদ্যিবাজনা আর রং বেরঙের সাজপোশাক নিয়ে জমে উঠেছিল বিশ্ব-বাঙালির মিলনমেলা। রোববার, ৮ মে, পূর্ব লন্ডনের বাংলাটাউনের উইভার্সফিল্ড ও এলেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় বাঙালির আবাহমান সংস্কৃতি বিশ্ব সংস্কতি’র সূতিকাগার ব্রিটেনে এভাবেই জানান দিল নিজের উপস্থিতি। প্রতিবছরের মত এবারও বৈশাখী মেলাটি পরিণত হয়েছিল বিশ্ব-বাঙালির মিলনমেলায়।   মেলায় যোগ দিতে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এমন কি বাংলাদেশ থেকেও এসেছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী আনন্দপিপাসু বিপুল সংখ্যক মানুষ। দীর্ঘদিন পর পরিচিত বন্ধুবান্ধব একে অপরের সাক্ষাৎ পান মেলায়।  সৃষ্টি হয় এক আবেগ আর আনন্দঘন পরিবেশ। পশ্চিমা ধারায় বেড়ে ওটা প্রজন্মের শেকড়মুখি হওয়ার একটি উপলক্ষ্যও যে এই মেলা--সেটাই  লক্ষ্য করা গেছে।

মরক্কোতে সদ্যনিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদও এসেছিলেন মেলায়। সারাদিনই তিনি মেলার বিভিন্ন প্রাঙ্গনে হেঁটে বেরিয়েছেন। উপভোগ করেছেন সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উইভার্স ফিল্ড ও এলেন গার্ডেনে স্থাপিত দুটো পৃথক মঞ্চ থেকে দিনব্যাপী প্রচারিত সঙ্গীতানুষ্ঠান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা। আর এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি ও সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস এর স্থানীয় শিল্পীদের সাথে ব্রিটেনে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীও নেচে নেচে গান পরিবেশনে মেতে ওঠেন আনন্দে।

স্থানীয় শিল্পীরা ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী বেবী নাজনীনসহ অন্যান্যদের সঙ্গীতের তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন সমবেত দর্শক শ্রোতারা। তবে মেলা কর্তৃপক্ষ যেসব শিল্পীকে এবার বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসেছিলেন, তাদের অনেকে আবার দর্শক শ্রোতাদের চাহিদামত গান পরিবেশন করতে পারেননি। কারো কারো গানের গলাও পছন্দ হয়নি দর্শকদের।

দেশ থেকে আসা কোনও কোনও  অখ্যাত শিল্পীর গানের সময় দর্শকরা তাই টিপ্পনি কেটেছেন। কারো কারো বেলায় মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার দাবিতে সোরগোলও তুলেছেন। স্থানীয় বাংলা টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল এস’ মেলার এই দিনব্যাপীি অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার করে। বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্ক ছিল উইভার্সফিল্ড মঞ্চ পরিচালনায়। বৈশাখী মেলার উপর রাত ১১ টায় তারাও প্রচার করে একটি লাইভ অনুষ্ঠান।

সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি দিয়ে  শুরু হয় বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। রং বেরঙের সাজে সজ্জিত হাজারও মানুষ বিভিন্ন রংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে র‌্যালিতে যোগ দেয়। বাঙালি ছাড়াও শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ অনেক তরুণ তরুণীকেও শাড়ী ও লুঙ্গি পড়ে র‌্যালিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।

নজর কেড়েছিল ভাষা আন্দোলনের প্রতীক একটি শহীদ মিনার নিয়ে একটি ট্রাকের পুরো বাংলাটাউন এলাকা প্রদক্ষিণ করার দৃশ্য। ছিল খোলা জিপে বরকনে সেজে বাংলাটাউন প্রদক্ষিণ ও বাংলা বর্ণমালাখচিত বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপস্থিতি। বৈশাখী মেলার র‌্যালিটিকে করে তোলে আরও বর্ণময়, আরও আকর্ষণীয়।

তরুণ তরুণী, মধ্যবয়সী এমকি অনেক বয়স্ক মানুষও সমবেত হয়েছিলেন বাঙালির এই প্রাণের উৎসবে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্টল বসেছিল বৈশাখী মেলাপ্রাঙ্গনে। এগুলোর মধ্যে ছিল বই, পেইন্টিং, বাঙালি পোশাক-আশাক, বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি। বিভিন্ন সামাজিক, সাস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনও নিজেদের প্রতিষ্ঠানের স্টল নিয়ে বসেছিল মেলায়। মেলাস্থলের অংশ ‘কারি-ক্যাপিট্যাল’ বলে খ্যাত ব্রিকলেনে বসেছিল সুস্বাদু বাঙালি খাবারের স্টল। অবাঙালি ভোজনরসিকদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে এইসব স্টলে।

দুপুরে উইভার্সফিল্ড মঞ্চে উঠে সমবেত জনতার সমুদ্রকে বৈশাখী মেলার শুভেচ্ছা জানান ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ডঃ সাইদুর রহমান খান, সাবেক লন্ডন মেয়র কেন্ লিভিংস্টোন ও টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।

হাইকমিশনার সাইদুর রহমান খান বলেন, বাংলা সংস্কৃতি আজ বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ, আজকের বৈশাখী মেলায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনসমাগম এরই প্রমাণ দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বাঙালির অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনা আজ বিশ্ববাসীকেও আকৃষ্ট করছে, এই চেতনার বিস্তৃত করার, বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার সংগ্রাম আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’

বিভিণœ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রবাসী বাঙালিদের সহযোগিতা কামনা করে হাইকমিশনার বলেন,‘বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ‘বাঙালিয়ানা’ আমাদের সাহস যোগাবে।

লন্ডনের সাবেক মেয়র ক্নে লিভিংস্টোন ব্রিটেনের বাঙালি কিমউনিটিকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতি ব্রিটেনের বহুসাংস্কৃতিক সমাজকে সমৃদ্ধ করেছে। অসুন্দর ও অপশক্তির বিরুদ্ধে বহুসাংস্কৃতিক এই চেতনা হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।  টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমান সমবেত জনসমাগমকে বৈশাখী মেলার শুভেচ্ছা জানান।

মৌলবাদীদের মেলাবিরোধী প্রচারণা
কয়েকটি মৌলবাদী সংগঠন মেলাবিরোধী প্রচারপত্র বিলি করলেও তা ছিল পুলিশের কঠোর নিয়ন্ত্রণে। মেলাস্থলের বাইরের বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে মৌলবাদী সংগঠনগুলোর কর্মীরা প্রচারপত্র বিলি করে। ‘বৈশাখী: একটি নিষিদ্ধ উৎসব এবং বৈশাখী মেলা বর্জন করুন’ লেখা বাংলা প্রচারপত্র এবং ‘বৈশাখী: আ রটেন প্রাইড’ শীর্ষক ইংরেজী একটি প্রচারপত্র তারা বিলি করে মেলায় আগতদের মধ্যে।

তবে তাদের এই প্রচারপত্র মেলায় অংশগ্রহণকারীদের উচ্ছ্বাস আনন্দে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। মেলাকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছিল ব্রিটিশ পুলিশ। আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনের হত্যাপরবর্তী সর্বোচ্চ নিরাপত্তার অংশ হিসেবেই তাদের এই সতর্কতা।

সন্ধ্যা ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা কার্যক্রম শেষ হলেও বাংলাটাউন এলাকায় মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল মানুষের উচ্ছলতা।

উল্লেখ্য, এপ্রিলের মধ্যভাগে বাংলা নববর্ষ হলেও সুন্দর আবহাওয়ার আশায় লন্ডনে প্রতিবছর মে মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে বৈশাখী মেলা বসে। আর মূল খরচটা বহন করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts