Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার গুঞ্জন

লন্ডন:বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন? প্রশ্নটি ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে আদালতসম্প্রতি তার ভাই আরাফাত রহমান কোকোর জামিন বাতিল করার পর  তারেক ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন বলে নতুন করে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।

এই গুঞ্জন কি স্রেফ  গুজব নাকি সত্যি-- নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। এ বিষয়ে জানতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি কমর উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাজ্য বিএনপির আরেক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি নিছকই গুজব। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই গুজব ছড়াচ্ছে।’

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে তারেকের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানতে না পারলেও এ নিয়ে যে  প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক ঔৎসুক্য  রয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

লন্ডনে স্বেচ্ছা  নির্বাসনের দুই বছর পার হয়ে গেলেও ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন আইনের কোন ক্যাটাগরিতে তারেক লন্ডনে বসবাস করছেন তাও জানেন না অনেকে।

মেরুদন্ড ও কোমরের ব্যথার অসুখ নিয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে তারেক লন্ডনে অবস্থান করলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। দেশ ছাড়ার আগে বিএনপি ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দিলেও রাজনীতি তারেককে ছাড়েনি। অথবা ওই ঘোষণা শুধু ঘোষণাই ছিল। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে তারেকের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে ওঠে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের থেকে সব সময় দূরে থাকলেও দলের যুক্তরাজ্য কমিটির শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কমর উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে আছেন সেই শুরু থেকেই।

দীর্ঘ দুই বছরের নির্বাসিত জীবনে  মাত্র দু’বার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন গভীরভাবে। লন্ডনে মিডিয়া থেকে দূরে রয়েছেন তারেক। তার অবস্থান ও কার্যক্রমও কঠোর গোপনীয়তার মোড়কে ঢাকা। ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন আইনের কোন ক্যাটাগরিতে তিনি লন্ডন অবস্থান করছেন তা খোদ  যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতারাও জানেন না।
ভিজিট ভিসায় যুক্তরাজ্যে ৬ মাসের বেশি অবস্থান করা যায় না । অথচ তারেক আছেন প্রায় দুই বছর। এ নিয়ে কমিউনিটিতেও এ নিয়ে চলছে গুজব-গুঞ্জন। কেউ বলছেন, তারেক রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ বলছেন বাংলাদেশ থেকে পাচার করা বিপুল টাকায় লন্ডনে পার্টনারশিপে ব্যবসা করছেন তিনি।  শুধু লন্ডন নয়, তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এমন গুজবও আছে লন্ডনে। ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন আইনে কমপক্ষে ২ লাখ পাউন্ড ক্যাশ থাকলে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ভিসা পাওয়া যায়। তারেক এই ক্যাটাগরিতেই লন্ডন আছেন কি-না, তা নিয়ে কমিউনিটিতে চলছে জোর জল্পনা। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তারেকের আর্থিক লেনদেনের  গুঞ্জনএখন অনেকটাই   ওপেন সিক্রেট।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কালো টাকা সাদা করার দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি হিসেবে ওই নেতার নামই প্রথম উঠে আসে মিডিয়ায়।

‘তারেক-মামুনের লন্ডন কানেকশন’ শিরোনামে ওই সময় বাংলাদেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়।  যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রভাবশালী ও বিতর্কিত এই নেতা তারেককে দেখভাল করার সুযোগে  এখন কেন্দ্রীয় বিএনপিরও একজন প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের মাধ্যমেই তারেকের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয়।

অভিযোগ আছে, তারেক-মামুনের কালো টাকা সাদা করার দায়িত্ব পড়েছিল তার ওপর।  তিনি ব্রিটেনের প্রথম সারির হুন্ডি ব্যবসায়ী এবং প্রায় তিন দশক ধরে এই ব্যবসায় জড়িত। হুন্ডি ব্যবসায়ী ওই নেতার সঙ্গে পার্টনারশিপ ভিত্তিতে ব্যবসা দেখিয়ে তারেক লন্ডনে রেসিডেন্ট হিসেবে বসবাস করছেন বলেই অনেকের ধারণা। ওই নেতাও বিনিময়ে অনেক কিছু আদায় করছেন তারেকের কাছ থেকে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির কর্তৃত্ব দখলের পর সিলেটের বিএনপি-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের একক কর্তৃত্ব দখল করার জন্যে এখন তারেককে ব্যবহার করতে চাইছেন তিনি। তারেকও  অদৃশ্য বাধ্যবাধকতার কারণে তার আবদার পূরণ করে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে কী এই বাধ্যবাধকতা?
সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে  সাবেক অর্থমন্ত্র্রী মরহুম সাইফুর রহমান পর্যন্ত  ইলিয়াস আলী গ্রুপের সঙ্গে পেরে ওঠেননি, অথচ  তারেককে ব্যবহার করে ওই নেতা তা অনেকটা পারছেন।

যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন নেতা অবশ্য এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তারেক রহমান মেডিকেল ভিসায়ই লন্ডনে আছেন। এখনও প্রতি সপ্তাহে তাকে মেডিকেল চেকআপ করাতে হয়। ঠিকমত হাঁটতে পারেন না এখনও। এমতাবস্থায় ডাক্তারের সুপারিশে তার ভিসার মেয়াদ সময় সময় বাড়ানো হচ্ছে।

যেহেতু মেয়ে জাইমা স্কুলে পড়াশোনা করছে, সেহেতু মেডিকেল ভিসার যুক্তি কতটুকু সঠিক সেটি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। মেডিকেল গ্রাউন্ডে বসবাসরতদের পোষ্যরা সাধারণত সরকারের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগও নেই। মেয়ে জাইমাকে প্রাইভেট স্কুলে পড়াশোনা করাতেও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। রেসিডেন্ট ভিসা না পেলে দীর্ঘ দুই বছর ধরে লাগাতার চিকিৎসা ব্যয়ই বা কীভাবে মেটাচ্ছেন তারেক?

মিডিয়া থেকে দূরে থাকার কারণেও স্থানীয় কমিউনিটিতে বিভিন্ন গুজব গুঞ্জনের সৃষ্টি হচ্ছে তারেককে নিয়ে। মিডিয়াও প্রকৃত অবস্থা জানাতে পারছে না কমিউনিটিকে। কেনই বা মিডিয়ার সঙ্গে এমন লুকোচুরি? কেন দলীয় নেতা-কর্মী ও কমিউনিটিকে এড়িয়ে চলছেন তা-ও এক বড় রহস্য।

সমালোচকরা বলছেন, বাংলাদেশে তার নামে দায়ের করা মামলাগুলো যদি মিথ্যে হয়, কেনই বা তারেক দেশে গিয়ে তা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করছেন না? এতটুকু সৎ সাহস না থাকলে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন কীভাবে? তাহলে কি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ সত্য?

যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন নেতাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে রাজনীতি না এনে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে তারেক রহমান লন্ডনে এসেছিলেন। এখনও সুস্থ হতে পারেননি। ডাক্তারের পরামর্শ ও সুপারিশেই লন্ডনে তার চিকিৎসা চলছে। একটি রাজনৈতিক সরকার মতায় আসার পর দেশবাসী আশা করেছিল তারেক রহমানের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। কিন্ত বর্তমান সরকার তা না করে উল্টো বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় তাকে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে। এটি অমানবিক। নিজের অসুস্থতার কারণে সব রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে যে ব্যক্তিটির অবস্থান, তাকে নিয়ে কেন সরকারের এত ভয়?’

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা জনাব হরমুজ আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাজনীতি একটি পবিত্র বিষয়। এতে স্বচ্ছতা থাকতে হয়, জবাবদিহীতা থাকতে হয়। তারেক রহমান বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা। তার সামাজিক, রাজনৈতিক সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কেই জনগণ জানার অধিকার রাখে। লন্ডনে দীর্ঘ দুই বছর কী অবস্থায়, কোন ক্যাটাগরির ভিসায় তিনি আছেন তা জনগণকে জানানো উচিত। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে দূর্নীতির মামলাগুলো তার ওপর হয়েছে, সৎ সাহস থাকলে দেশে গিয়ে তা মোকাবেলা করা উচিত তার। মিডিয়াকে কেন তার এত ভয়? লন্ডনের ব্যয়বহুল জীবন যাপনের খরচই বা আসছে কোথা থেকে? একজন রাজনীতিক হিসেবে এ বিষয়গুলো জনগণের কাছে তার পরিস্কার করা উচিত।’

বাংলাদেশ সময় : ২২৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১০
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts